-->

ads

China Government Scholarship Process for Bangladeshi Student

China government scholarship

চায়নার স্কলারশিপ নিয়ে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন এবং উত্তর....

শামীমা শাম্মী

ডংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়

১. চায়নাতে মাস্টার্স করতে চাচ্ছি, কেমন হবে, চায়নাতে মাস্টার্স করা কি ঠিক হবে? 

উত্তর- এই প্রশ্নের উত্তর এককথায় আপনার ইচ্ছা। আপনার লাইফ, সিদ্ধান্ত আপনার। আপনাকে আমি দিকনির্দেশনা/ সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ধারণা দিতে পারি মাএ। কিন্তু আপনার জীবনের সিদ্ধান্ত একান্তই আপনার নিজের। যেহেতু মাস্টার্স করতে ইচ্ছুক আশা করব নিজের ডিসিশন নিজে নিতে পারবেন। আমি আপনাকে কিছু বিষয়ে বিস্তারিত বলার চেষ্টা করছি, আপনি সিদ্ধান্ত নিবেন-


★চায়নার এডুকেশন গবেষণা নির্ভর। এখানে আপনাকে বেশি সময় (আনুমানিক ১০-১২ ঘন্টা) দিতে হবে ল্যাবে। এক্ষেত্রে চায়নাকে আমি বাংলাদেশ থেকে অনেকটা এগিয়ে রাখবো। আর দেশ হিসাবে সবকিছু বিবেচনায (শিক্ষা, ভাষা, জীবন ধরণ, পি.আর, বাচ্চাদের শিক্ষা) দিক থেকে আমি মনে করি - আমেরিকা> কানাডা/অস্ট্রেলিয়া> ইউরোপ> এশিয়া (এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত)। আর আপনার যদি পি.আর (পারমানেন্ট রেসিডেন্সির) ইচ্ছা থাকে তবে চায়নাতে পি.আর অসম্ভব। পি.আর শুধুমাএ হাই লেভেল ট্যালেন্ট (সাইন্টিস্ট) থাকলে তাদেরকে দেওয়া হয়।


★আপনার মাস্টার্স করার কোন দরকার আছে কি? আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? আমাদের দেশের সবাই চায় আগে মাস্টার্স শেষ করি, তারপর চাকরি। চায়নাতে আমি দেখেছি ৬০%-৭০% শিক্ষার্থী ব্যাচেলর শেষে চাকরিতে প্রবেশ করে। হায়ার এডুকেশন শুধুমাত্র যারা টিচিং এ আগ্রহী তারাই করে থাকে। কিছু ব্যতিক্রম ও আছে।


<>শিক্ষকতা যদি আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হয় তবে শুধুমাএ মাস্টার্স নয়, আপনার পরিকল্পনায় পি.এইচ.ডি ও রাখবেন আশা করব।


<>আপনি যদি চায়নাতে/ চায়নিজ কোম্পানিতে জব করতে চান, চায়নার ইউনিভার্সিটি আপনাকে অনেকটা এগিয়ে দিবে। চায়নিজ কোম্পানি চায়নিজ ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী, চায়নিজ ও ইংলিশ ভাষার উপর দক্ষদের কদর করে।


<>যদি আপনি বাংলাদেশে ফিরে আবার আগের কোম্পানি / বাংলাদেশের কোন কোম্পানিতে যোগদান করতে চান তবে আমার মতে মাস্টার্স সময়টা (দুই/তিন বছর) আপনি পিছিয়ে যাবেন। কারন বাংলাদেশে আপনাকে আবার নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে হতে পারে। এই বিষয়ে আমি বাংলাদেশে থেকে জবের পাশাপাশি মাস্টার্স করাকে বেটার মনে করি।


২. স্কলারশিপ পেতে সি.জি.পি.এ (CGPA) কেমন থাকতে হবে?

উত্তর- China Government Scholarship এর জন্য কোন নিদিষ্ট সিজিপিএ প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয় না। স্কলারশিপ পাওয়া না পাওয়া একজন আবেদনকারীর সম্পূর্ণ প্রোফাইলের উপর নির্ভর করে। শুধুমাত্র সিজিপিএ-র (CGPA) উপর না। প্রোফাইল বলতে তার


>একাডেমিক রেজাল্ট

>একাডেমিক এচিভমেন্ট

>কাজের অভিজ্ঞতা

>গবেষণা ও পাবলিকেশন

>সামাজিক ও অন্যান্য এক্টিভিটি

>ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফিশিয়েন্সি ( IELTS, HSK)


সবকিছু দেখেই China Government Scholarship দেওয়া হয়। মূল কথা আপনাকে অন্য আবেদনকারীর থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। স্কলারশিপ সংখ্যা লিমিটেড, আবেদনকারীর সংখ্যা যদি বেশি হয়, তবে যার প্রোফাইল রিচ না, সেই বাদ পড়বে এটাই স্বাভাবিক।


৩. আপনার ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পেতে আমাকে হেল্প করবেন?

উত্তর - আমি শুধু আপনাকে দিকনির্দেশনা দিতে পারি। সব কাজ আপনার নিজেকেই করতে হবে। আমি প্রসেস বলতে পারবো, কিন্তু আপনার প্রোফাইল, ডকুমেন্টস, এপ্লিকেশন আপনাকে করতে হবে। iস্কলারশিপ পাওয়া না পাওয়া শুধুমাএ আপনার প্রোফাইল ও সিলেকশন কমিটির উপর নির্ভর করবে। আমি নিজেও ২০১৮ সালে বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটিতে এপ্লাই করেছিলাম, কিন্তু কোন ইউনিভার্সিটি থেকে ফুল স্কলারশিপ পায়নি। আবার ২০১৯ এ এপ্লাই করি, একটা ইউনিভার্সিটি থেকে ফুল স্কলারশিপ ও একটা ইউনিভার্সিটি থেকে China Government Scholarship পেয়েছি ২০১৯ সালে।


৪. চায়নার ইউনিভার্সিটির এপ্লিকেশন প্রসেস শুরু হয় কখন?

উত্তর - চায়নার ম্যাক্সিমাম ইউনিভার্সিটির Admission circular ডিসেম্বর মাসে পাবলিশ হয়। এপ্লিকেশনের শেষ সময় মার্চের ৩১ তারিখ। ফাইনাল রেজাল্ট জুন/জুলাই মাসে পাবলিশ করে, আর একাডেমিক কার্যক্রম সেপ্টেম্বরে শুরু হয়।


৫. পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করা যায় কি?

উত্তর - না, চায়নাতে এখন পযন্ত স্টুডেন্টদের কাজ করার অনুমতি নেই। চায়নার পড়াশোনা গবেষণা নির্ভর। ক্লাস, ল্যাব, রান্না ও অন্যান্য কাজ করার পরে চাকরি করার সময় হবেনা। আর চায়নার ম্যাক্সিমাম মানুষ ইংলিশ বলতে ও বুঝতে পারেনা। সুতরাং আপনি চায়নিজ ভাষা না জানলে নিজেই ঠিকভাবে চলতে পারবেন না, কিভাবে চাকরি করবেন? কিছু ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ টিচিং সেন্টারে, ইংলিশ টিচারের জব পাওয়া যায়, সেখানেও বেসিক চায়নিজ জানা লাগবে আর তারা নেটিভ ইংলিশ স্পিকার প্রেফার করে।


৬. পড়াশোনা শেষে চায়নাতে চাকরি পাওয়া যায় কি?

উওর - আমার ইউনিভার্সিটির আগের কয়েক বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যারা চায়নাতে জব করার জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প ছিলো তাদের অধিকাংশ জব পেয়েছে, কিন্তু জব পাওয়ার থেকে সেখানে সারভাইভ করাটাই চ্যালেঞ্জ। মেক্সিমাম জব সেলস ও মার্কেটিং রিলেটেড। টেকনিক্যাল জব পাওয়া গেলেও, জব কন্টিনিউ করা সহজ নয়। কারন আমার মতে চায়নিজদের টেকনিক্যাল নলেজ আমাদের থেকে অনেক বেশি আর টেকনিক্যাল জবের জন্য চায়নিজ ভাষার উপর (লিখতে, পড়তে, বলতে, বুঝতে) খুব ভালো নলেজ থাকতে হবে।

চাকরি পাওয়া না পাওয়া আপনার নেটওয়ার্ক ও দক্ষতার উপর নির্ভর করবে। এখানে আপনার সিনিয়র আপনাকে শুধুমাত্র দিকনির্দেশনা ও সার্কুলার হলে আপনাকে জানাতে পারে, কিন্তু তাদের রেফারেন্সে চাকরি হবার উদাহরণ এখন পযন্ত আমার দেখা নাই। আর বেশিরভাগ চায়নিজ কোম্পানি সর্বোচ্চ একজন ফরেন এম্পলয়ি নিতে চায়। চাকরি পাওয়ার জন্য প্রফেসর অনেক ভাবে সাহায্য করতে পারে। অনেকের খুব ভালো চাকরি হয়েছে তার প্রফেসরের মাধ্যমে। সুতরাং চাকরি পেতে চায়নিজদের সাহায্য কাজে লাগবে, আমাদের নয়, আমরা নিজেরাই এখানে অভিবাসী।

চাকরি পাওয়ার পরে কোম্পানি থেকে আপনার ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিটের জন্য এপ্লাই করতে হবে। এই ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিট পেলেই চায়নাতে থাকা ও কাজ করা যাবে। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন।


আর কোন প্রশ্ন থাকলে, আমি চেষ্টা করবো উত্তর দিতে। তবে দয়া করে উদ্ভট প্রশ্ন করবেন না।


ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইল


বি:দ্র: উল্লেখ্য সবটাই আমার নিজের মতামত ও লেখা। অনেকে আমার সাথে একমত নাও হতে পারে। সুচিন্তিত মতামত গ্রহনযোগ্য।


Shamima Shammi

Master's Student

Donghua University

Shanghai, China 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ